Monday, 20 September 2021

ভেজাল খাবারে শরীরের কী ক্ষতি হয়?

 



.

দুধে পানি মেশানোর কথা বহুকাল আগে থেকেই শুনছি। এখন পানি মেশানো ছাড়াও গরুর শরীরে পিটুইটারি ইনজেকশন দিয়ে দুধের পরিমাণ বাড়ানো হয়। এটাও একরকম ভেজাল। শাকসবজি কপার সালফেট পানিতে (তুঁতে) ডুবিয়ে রাখা হয় টাটকা ও তাজা দেখানোর জন্য।
মৌসুমি ফল আম, লিচু ও জামে দেওয়া হয় কারবাইড ও ফরমালিন। ফল গাছে থাকতেই ছিটানো হয় হরমোন ও কীটনাশক। সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজের ভেতরে দেওয়া হয় তরল পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট। এর ফলে তরমুজের ভেতর থাকে লাল টকটকে। ক্যালসিয়াম কারবাইড দিয়ে পাকানো হয় কলা। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের জন্য মাছে দেওয়া হয় ফরমালিন। এ ছাড়া পক্ষাঘাত সৃষ্টিকারী খেসারির ডাল ব্যবহার করা হয় বেসন তৈরিতে। চায়ের সঙ্গে চামড়ার ছোট টুকরো, কফি পাউডারের সঙ্গে তেঁতুলের বিচির গুঁড়া, মসলায় ইটের গুঁড়া এবং হলুদে লেড ক্রোমেট বা লেড আইয়োডাইড মেশানো হয়। ভেজালের এই তালিকা আরও অনেক দীর্ঘ।
ভেজাল খাবারে কী ক্ষতি হয়: কপার সালফেট বা তুঁতের জলে ডোবানো শাকসবজি খেলে যকৃতের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ভেজাল মসলার গুঁড়া পাকস্থলী বা অন্ত্রের ক্ষতি করে। ইউরিয়া মেশানো মুড়ি ভাজা খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। সন্দেশ বা পানে রুপার তবকের বদলে অ্যালুমিনিয়ামের তবক ব্যবহারে আলঝেইমার রোগ হতে পারে। লেড ক্রোমেট বা লেড আইয়োডাইড মেশানো হলুদের গুঁড়ো ব্যবহারে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মেটালিক ইয়েলো বা কিশোরী রং খাবারে মেশালে চোখের ক্ষতি হতে পারে। খাবারে কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। এ ছাড়া চোখ, ত্বক ইত্যাদির ক্ষতি হয়। পাশাপাশি পেট খারাপ, বমি, চুলকানি, এনকেফেলাইটিস, রক্তস্বল্পতা, গর্ভপাত এবং বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে।
ফরমালিন এড়াতে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। ফরমালিন দেওয়া মাছের গায়ে পিচ্ছিল ভাব থাকবে না, মাছের গা খসখসে হবে, চোখের মণি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ না হয়ে ঘোলা আর মলিন দেখাবে। রান্নার পর এই মাছে স্বাভাবিক স্বাদ পাওয়া যাবে না, বিশেষ করে মাথা ও পেটের অংশ অত্যন্ত বিস্বাদ ও রাসায়নিক গন্ধযুক্ত হবে।
একই ভাবে ফরমালিন দেওয়া দুধের তৈরি মিষ্টিতে দুধের স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যাবে না। এর বদলে রাসায়নিকের গন্ধ পাওয়া যাবে। ফরমালিন দেওয়া আঙুর, আপেল, নাশপাতির বেলায়ও স্বাভাবিক সুগন্ধ থাকবে না। আপেল, নাশপাতিও দিনের পর দিন রাখলেও পচে না। কোনো মাছের বা ফলের দোকানে ক্রেতার চোখ বা নাকে ঝাঁজ লাগলে বুঝতে হবে এখানে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়।
ফরমালিন অত্যন্ত বিষাক্ত বলে নিয়মিত ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া ফরমালিন খাদ্য পরিপাকে বাধা দেয়, পাকস্থলীর ক্ষতি করে, যকৃতের অ্যানজাইম নষ্ট করে এবং কিডনির কোষ ধ্বংস করে। ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার বাড়ে, লিভার ও কিডনির নানা রকম জটিল রোগ দেখা দেয়। ফরমালিনের প্রভাবে নারীদের মাসিক ঋতুস্রাবের সমস্যা দেয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফরমালিন আরও ক্ষতিকর। এর কারণে গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে ১৫ মিনিট ফল বা সবজি ভিজিয়ে রাখলে প্রায় শত ভাগ ফরমালিনই দূর হয়। ভিনেগার না থাকলে ফল খাওয়ার আগে লবণ পানিতেও ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এতে ফরমালিন দূর হবে অনেকখানি।
বিশুদ্ধ পানিতে প্রায় এক ঘণ্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়। ফরমালিন দেওয়া মাছ লবণ মেশানো পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে ৯০ শতাংশ ফরমালিনের মাত্রা কমে যায়। অপরদিকে, প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে এবং পরে সাধারণ পানিতে ফরমালিন যুক্ত মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: