Monday, 20 September 2021

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে আমাদের কিছু করণীয়

 


এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু অথচ কী ভয়ংকর এর ক্ষমতা খাদ্যশৃঙ্খলের সবচেয়ে ওপরের প্রাণী, সভ্যতা ক্ষমতার দম্ভ করে বেড়ানো মানুষদের একেবারে নাকানিচুবানি দিয়ে ছাড়ে আমার বড় ছেলের জন্মের সময়েইবোলাখুব যন্ত্রণা করেছিল এখন ছোটটার জন্মের সময়ে করোনা করছেযেকোনো ভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রথমেই যেটা করতে হবে, তা হচ্ছে সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা এইচআইভি ভাইরাস যেমন যৌনতা বা রক্তের মাধ্যমেই ছড়ায় হাঁচি, কাশি বা ছোঁয়ার মাধ্যমে নয় তাই এইচআইভি রোগীর সঙ্গে যেমন মেলামেশা করবেন, বায়ুর মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাস (যেমন করোনা, ইবোলা ইত্যাদি) আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সেভাবে মেলামেশা করবেন না

 

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন মাস্ক পরার চেষ্টা করুন যেকোনো কিছু ছোঁয়ার আগে অবশ্যই মাথায় রাখবেন সেখানে প্রাণঘাতী জীবাণু থাকতে পারে

 

যেকোনো জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদিকে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে হ্যান্ডেল করুন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন নিজে ডাক্তারি ফলাতে যাবেন না

 

যদি দেখেন আপনার শিশুর জ্বর এসেছে, তাকে স্কুলে পাঠাবেন না আমার ছেলের স্কুলের নিয়ম হচ্ছে (আমেরিকান স্কুলগুলোর একই নিয়ম) ২৪ ঘণ্টা জ্বরমুক্ত না থাকলে তাকে স্কুলে গ্রহণ করা হয় না আগের দিন সকাল ১১টায় যদি শেষবারের মতো জ্বর রেকর্ড করা হয়ে থাকে ( ক্ষেত্রে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট শরীরের তাপমাত্রা), তবে পরের দিন সকাল ১১টার পরে স্কুলে যেতে পারবে স্কুল ব্যাপারে কোনো ঝামেলা করে না ফাঁকিবাজি ঠেকাতে ডাক্তারের লিখিত পত্র স্কুলে জমা দিতে হয় সঙ্গে অভিভাবকের স্বাক্ষরসংবলিত লিখিত পত্র বা মেইল, যে তাঁরা জানেন তাঁদের সন্তান অসুস্থ ছিল আমাদের দেশের স্কুল কর্তৃপক্ষেরও বিষয়ে শিথিলতা প্রয়োজন

 

ছাড়া স্কুলেও যদি কোনো ছাত্রের জ্বর টের পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয় শিক্ষক-অভিভাবকের যৌথ উদ্যোগেই স্কুল-কলেজ ফ্লু মুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়

 

আপনি যদি নিজে অসুস্থ হন, তাহলে অফিসে যাবেন না আপনার মাধ্যমে অফিসের কারও ফ্লু হতে পারে আপনি হয়তো বেঁচে যাবেন যাকে আক্রান্ত করবেন, তিনি হয়তো বাঁচবেন না তাই এমন ঝুঁকি কখনই নেবেন না ক্ষেত্রে অফিসের বসদের একটু শিথিল হতেই হবে নিজেদের স্বার্থেই

 

আপনি যদি দেখেন অফিসের কারও জ্বর/সর্দি/কাশি হয়েছে, তাহলে অবশ্যই তার থেকে কমসে কম পাঁচ ফুট দূরত্ব রেখে কথাবার্তা বলবেন কাছে ঘেঁষবেন না তিনি যা ছোঁবেন, স্পর্শ করবেন, খবরদার সেসব ভুলেও ছুঁয়ে দেখবেন না স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করবেন দেশে প্রথম প্রথম বিদেশি কলিগদের এমন আচরণে খুবই মর্মাহত হতাম মনে হতো আমি যেন বর্ণবাদ সমাজের অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের কেউ, আমায় ছুঁলে জাত যাবে কিন্তু পরে উপলব্ধি করলাম, তাঁর হাসপাতালের বিলও আমি দেব না, তাঁর বাচ্চাকাচ্চা এতিম হলে ওদের দেখভালের দায়িত্বও নেব না নিজের সাবধানতা নিজের কাছে, তাঁরা সেটাই করছেন

 

গর্ভবতী নারী বা নবজাতক শিশু জন্মালে দেখতে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক সামাজিকতা যদি আপনার নিজের বা নিজের পরিবারের কারও জ্বর, সর্দি, কাশি থাকে, তবে যত আপন আত্মীয়ই হোক না কেন, অবশ্যই সেই শিশুকে দেখতে যাবেন না শিশুর মাবাবাকে জানাবেন যে বাড়িতে কেউ অসুস্থ তাই আসতে পারেননি গর্ভবতী নারীর ফ্লু হলে তাঁর গর্ভপাতও ঘটতে পারে তাই গর্ভবতীর জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে হসপিটাল ইমার্জেন্সিতে যাবেন

 

এদিকে নবজাতক শিশু খুবই দুর্বল থাকে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বললেই চলে এমতাবস্থায় আপনার স্পর্শ, চুমু নিশ্বাসের ফলে সেই শিশুটির প্রাণঘাতী সংক্রমণ হতে পারে নিজে একটু দায়িত্ববান হন আপনি কোলে না নিয়েও শিশুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন সেটাই করুন হাত ভালো করে জীবাণুমুক্ত না করে (স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে না ধুয়ে) কোনো অবস্থাতেই নবজাতককে স্পর্শ করবেন না

 

পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন খাওয়ার পরে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন বা না করুন, খাবারের আগে অবশ্যই ভালো করে কমপক্ষে বিশ থেকে তিরিশ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে এরপরে খাবার খাবেন ফ্লু সিজনে অবশ্যই জেনে বুঝে নিশ্চিত হয়ে খাবেন যে খাবার সম্পর্কে ধারণা নেই, সেই খাবার খাবেন না রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি হাত ধুয়ে রান্না করেছে বা কিচেন খুবই পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন, ইঁদুরতেলাপোকার বাস নেই, সেখানে ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে রেস্টুরেন্টের খাবার মুখে তুলবেন না বাইরের খোলা খাবার খাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না সবচেয়ে ভালো হবে যদি নিজের বাড়িতেই রান্না করা খাবার খান ওটা আপনার নিয়ন্ত্রণে

 

হাদিসে আছে, ‘যদি শোনো কোনো শহর মহামারি আক্রান্ত হয়েছে, তবে সেখানে যেও না আর যদি দেখ, তোমার শহর মহামারি আক্রান্ত হয়েছে, তবে শহর থেকে বের হয়ো না’ (Al-Bukhaari (5739) and Muslim [2219])

 

যখন এই হাদিস লেখা হয়েছে, তখন এসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষ আরও বেশি অসহায় ছিল শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারত না কার হয়েছে, কার হয়নি তাই নবী (.)–এর নির্দেশ দিয়েছেন, কিছুতেই যেন ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ না পায় চীন সরকার একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরো শহর শাটডাউন করে ফেলেছে না কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে, না বেরোতে

 

যদি না আপনি চিকিৎসক হয়ে থাকেন, অথবা নার্স, কিংবা কোনোভাবে তাঁদের উদ্ধারকাজে সহায়তা দলের লোক হয়ে থাকেন, তবে দয়া করে সেসব স্থানে কেবল তামাশা দেখতে ভিড় করবেন না আপনার মাধ্যমেই ভাইরাসটি আপনার বাড়িতে, আপনার শহরে প্রবেশ করবে

 

ইউরোপিয়ানরা যখন আমেরিকা আবিষ্কার করে, তখন তারা নিজেদের শরীরের সঙ্গে ইউরোপিয়ান রোগ জীবাণু বয়ে এনেছিল আমেরিকান আদিবাসীদের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা কেবল সেই জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল ভাইরাস এতটাই ভয়ংকর বুবনিক প্লেগ, স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদির ইতিহাস একটু ঘেঁটে পড়ে ফেলুন ওসব মহামারি এই যুগে হলে মিলিয়ন মিলিয়নের বেশি লোক সাফ হয়ে যাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলেও এত মানুষ মরবে কি না সন্দেহ

 

বিশ্বের নানা দেশ তাদের নাগরিকদের শহর থেকে সরিয়ে নিচ্ছে অবশ্যই তাদের মেডিকেল স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমেই ফিল্টার করে করে সরানো হচ্ছে আমেরিকা তাদের নাগরিকদের সরিয়েছে, জার্মানি সরিয়েছে, ফ্রান্স-জাপানও করেছে বাংলাদেশের চার শতাধিক নাগরিক সেখানে আটকা পড়েছিলেন আমাদের সরকারও তাঁদের বেশির ভাগকে ফিরিয়ে এনে হজ ক্যাম্পে রেখেছে

 

মেডিকেল স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ফিল্টার করে নিশ্চিত হয়ে নির্দিষ্ট সময় পর তাঁদের হজ ক্যাম্প থেকে ছাড়া হবে কেউ আক্রান্ত হলে তাঁদের ওখানে রেখেই চিকিৎসা করা হবে আমার মতে, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত কারণ, আমাদের দেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এই রোগ প্রবেশ করলে বিপর্যয় নেমে আসবে আমরা ডেঙ্গুই প্রতিরোধ করতে অক্ষম, করোনা যত দূর জানি, আরও ভয়ংকর


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: